লেবুর চর: কুয়াকাটার কোলে এক সবুজের হাতছানি

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কথা উঠলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল নীল জলরাশি আর সূর্যাস্তের মায়াবী দৃশ্য। কিন্তু এই সৈকতের ঠিক পাশেই, মাত্র ৫ কিলোমিটার পূর্বে লুকিয়ে আছে সবুজে ঘেরা এক অন্যরকম সৌন্দর্য – লেবুর চর, যা স্থানীয়দের কাছে নেম্বুর চর নামেও পরিচিত। প্রায় ১০০০ একর আয়তনের এই চর যেন সবুজের এক সুবিশাল ক্যানভাস, যেখানে কেওড়া, গেওয়া, গোরান, কড়ই, গোলপাতাসহ নানা প্রজাতির গাছেরা মিলেমিশে গড়ে তুলেছে এক প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য।

একটা সময় সুন্দরবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল লেবুর চর, যদিও বর্তমানে এটি সুন্দরবন থেকে বিচ্ছিন্ন। তবে এখনো চরের শেষ প্রান্তে দাঁড়ালে দেখা মেলে সুন্দরবনের ঘন সবুজ গাছের সারি। বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময়, যখন সূর্যের সোনালি আভা বিস্তীর্ণ চরের উপর আছড়ে পড়ে, তখন চারপাশের দৃশ্য এতটাই মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে যে মনে হয় যেন কোনো অপার্থিব জগতে চলে এসেছেন। লেবুর চরের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই পর্যটকদের বারবার মুগ্ধ করে।
কীভাবে যাবেন লেবুর চরে?
লেবুর চরে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে পৌঁছাতে হবে কুয়াকাটা।
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা:
- সড়কপথে: পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাত্রা এখন অনেক সহজ ও সময়সাপেক্ষ। ঢাকা থেকে কুয়াকাটার দূরত্ব প্রায় ২৯৪ কিলোমিটার এবং বাসে যেতে সময় লাগে ৬-৭ ঘণ্টা। ঢাকার সায়েদাবাদ, আবদুল্লাহপুর, আরামবাগ অথবা গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে সাকুরা পরিবহন, শ্যামলী, গ্রীনলাইন, ইউরো কোচ, হানিফ, টি আর ট্রাভেলস সহ অনেক বাস সরাসরি পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটা যায়। নন-এসি বাসের ভাড়া ৭৫০-৯০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১১০০-১৬০০ টাকা।
- নদীপথে: ঢাকার সদরঘাট নৌ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন লঞ্চ পটুয়াখালী বা বরিশাল হয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সাধারণত সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে এই লঞ্চগুলো ছাড়ে।
কুয়াকাটা থেকে লেবুর চর:
কুয়াকাটা থেকে লেবুর চরে যাওয়ার জন্য সাইকেল অথবা ভ্যান ভাড়া করতে পারবেন। কুয়াকাটা থেকে সকালে রওনা দিলে বিকেলের মধ্যেই চরটি ঘুরে ফিরে আসতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন ও খাবেন?
থাকার ব্যবস্থা:
কুয়াকাটায় পর্যটকদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রকারের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে।
- সরকারি আবাসন: এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথের রেস্ট হাউজ, রাখাইন কালচার একাডেমীর রেস্ট হাউজ।
- বেসরকারি আবাসন: সাগর কন্যা পর্যটন হলিডে হোমস, ইয়ুথ ইন হোটেল, হোটেল গ্রেভার ইন, সি ভিউ হোটেল, সিকদার রিসোর্ট, কুয়াকাটা গ্র্যান্ড হোটেল, ম্যানগ্রোভ হোটেল, পর্যটন মোটেল, হোটেল বীচ হ্যাভেন ও সিগার্ল সহ আরও অনেক হোটেল ও মোটেল রয়েছে।
খাওয়ার ব্যবস্থা:
চরের পাশেই ছোট ছোট ফুড শপগুলোতে বিভিন্ন ধরণের তাজা সামুদ্রিক মাছ ও কাঁকড়া ভাজা পাওয়া যায়। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্টে জয়, হোটেল সানরাইজ, বার্মা হোটেল, রামজান রেস্তোরাঁ, অতিথি ও বৈশাখী সহ বেশ কিছু ভালো রেস্টুরেন্ট আছে যেখানে স্থানীয় ও সামুদ্রিক খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন।
পটুয়াখালীর আরও কিছু দর্শনীয় স্থান
লেবুর চরের পাশাপাশি পটুয়াখালী জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন:
- কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত
- পানি জাদুঘর
- সোনারচর
- ফাতরার চর
এই চরের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তাহলে আর দেরি কেন? আপনার পরবর্তী ছুটিতে লেবুর চরের সবুজে ঘেরা মায়াবী প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে চলে আসুন কুয়াকাটায়!
Comments
Post a Comment