পাচঁগাও, নেত্রকোণা: এক স্বপ্নীল পাহাড়ি গ্রাম
পাঁচগাঁও: প্রকৃতির নিপুণ হাতে গড়া এক অপরূপ গ্রাম
প্রকাশিত: জুলাই ২৩, ২০২৫ | স্থায়ী লিঙ্ক
নেত্রকোণা জেলার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার রংছাতি ইউনিয়নে অবস্থিত পাঁচগাঁও (Pachgaon) গ্রামটি যেন প্রকৃতির এক নিপুণ হাতে গড়া ছবি। পাহাড়ি সৌন্দর্য, সবুজের সমারোহ আর নির্মল বাতাসের টানে এই গ্রামটি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি গন্তব্য। প্রকৃতিপ্রেমী এবং অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য পাঁচগাঁও হতে পারে এক অনবদ্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।
পাঁচগাঁওয়ের মূল আকর্ষণ: চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়
পাঁচগাঁওয়ের প্রধান আকর্ষণ হলো চন্দ্রডিঙ্গা পাহাড়, যা স্থানীয়দের কাছে পাঁচগাঁও টিলা বা কলমাকান্দার পাহাড় নামেও পরিচিত। জনশ্রুতি আছে যে, শত শত বছর আগে চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য তরী এখানেই ডুবে গিয়েছিল, আর এই পাহাড়ের আকৃতি অনেকটা নৌকার মতো হওয়ায় এর নামকরণ হয়েছে চন্দ্রডিঙ্গা বা চন্দ্রডিঙ্গি। এই পাহাড়ে আরোহণ করলে আপনি দেখতে পাবেন ছোট ছোট ঝর্ণা, কলকল ধ্বনিতে বয়ে চলা ঝিরিপথ এবং সবুজে মোড়া সমতল ভূমি, যা মনকে এক অন্যরকম প্রশান্তি দেবে।
পাঁচগাঁও ও আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
পাঁচগাঁও ভ্রমণের সময় আপনি এক ঢিলে অনেক পাখি মারতে পারবেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঘুরে আসতে পারবেন আরও কিছু আকর্ষণীয় স্থান:
- বিশাল বটগাছ: পাঁচগাঁও গ্রামে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে একটি বিশাল বটগাছ। এর ছায়ায় বসে আপনি ক্লান্তি দূর করতে পারবেন এবং গ্রামের শান্ত পরিবেশ উপভোগ করতে পারবেন।
- ঝর্ণা ও ঝিরিপথ: চন্দ্রডিঙ্গা টিলায় আরোহণের পথে আপনার সঙ্গী হবে ছোট-বড় বেশ কিছু ঝর্ণা এবং মন মুগ্ধ করা ঝিরিপথ। বর্ষাকালে এদের রূপ যেন আরও খুলে যায়।
- লেংগুরা টিলা: পাঁচগাঁওয়ের খুব কাছেই অবস্থিত লেংগুরা টিলা গারো পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য একটি দারুণ জায়গা।
- সাত শহীদের মাজার: কলমাকান্দা উপজেলার একটি ঐতিহাসিক স্থান হলো সাত শহীদের মাজার। এখানে এসে আপনি ইতিহাসের ছোঁয়া পাবেন এবং শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন।
কিভাবে যাবেন পাঁচগাঁও?
পাঁচগাঁও পৌঁছানো এখন বেশ সহজ। ঢাকা থেকে আপনি বিভিন্ন উপায়ে এখানে যেতে পারবেন:
১. সরাসরি কলমাকান্দা হয়ে:
- ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতি রাতে কলমাকান্দার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। এই বাসগুলো আপনাকে ভোরবেলা কলমাকান্দা বাজারে পৌঁছে দেবে। ভাড়া পড়বে প্রায় ৪০০-৪৫০ টাকা।
- কলমাকান্দা বাজার থেকে পাঁচগাঁও যাওয়ার জন্য বাইক বা সিএনজি ভাড়া করতে পারবেন।
২. নেত্রকোণা হয়ে:
- মহাখালী থেকে নেত্রকোণার বাস ভাড়া প্রায় ৩০০ টাকা।
- নেত্রকোণা পৌঁছে সিএনজিতে করে কলমাকান্দা যেতে পারবেন, যার ভাড়া প্রায় ১৫০ টাকা।
- কলমাকান্দা থেকে বাইকে চড়ে পাঁচগাঁও টিলা বা কলমাকান্দার পাহাড়ে পৌঁছানো যায়।
৩. ময়মনসিংহ হয়ে:
- ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বাসে যেতে পারেন, ভাড়া প্রায় ২০০ টাকা।
- ময়মনসিংহ থেকে নেত্রকোণা পর্যন্ত বাসে ভাড়া ৫০ টাকা বা সিএনজিতে ৮০ টাকা।
- নেত্রকোণা থেকে বাকি পথ উপরে উল্লেখিত উপায়ে যেতে পারবেন।
৪. ট্রেনে:
- ঢাকা থেকে ট্রেনে করেও আপনি নেত্রকোণা অথবা ময়মনসিংহ যেতে পারবেন। এটি একটি আরামদায়ক বিকল্প।
থাকার ব্যবস্থা ও খাবারের খোঁজ
পাঁচগাঁও সাধারণত দিনের বেলায় ঘুরে আসার জন্য উপযুক্ত। যদি রাতে থাকার প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনাকে নেত্রকোণা শহরে ফিরে আসতে হবে। নেত্রকোণা শহরে কিছু ভালো হোটেল আছে যেখানে আপনি রাত্রিযাপন করতে পারবেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- হোটেল সোনার তরী
- হোটেল জয়া ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল সুরমা
পাঁচগাঁও গ্রামে খাবারের দোকান সীমিত। তাই ভ্রমণের সময় সঙ্গে কিছু শুকনো খাবার ও পর্যাপ্ত পানি নিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। পাঁচগাঁও ও কলমাকান্দা বাজারে কিছু স্থানীয় খাবারের হোটেল পাওয়া যায়। তবে, নেত্রকোণা শহরে আপনার পছন্দমতো যেকোনো ধরনের খাবার উপভোগ করতে পারবেন। আর নেত্রকোণা গেলে তাদের বিখ্যাত বালিশ মিষ্টি চেখে দেখতে ভুলবেন না যেন!
পাঁচগাঁওয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এখানকার শান্ত পরিবেশ আপনাকে শহুরে কোলাহল থেকে দূরে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যাবে। আপনার ভ্রমণের জন্য শুভকামনা!
Comments
Post a Comment